চন্দ্র সূর্যগ্রহণ কালে গর্ভবতী মহিলাকে নিয়ে আমাদের সমাজে রয়েছে বিভিন্ন রকমের কুসংস্কার। অনেকেই বলে থাকেন এই সময় খেতে হয় না তৈরি করা খাবার ফেলে দিতে হয় গর্ভবতী মায়েরা এই সময় কোন কিছু কাটলে ছিলে বাচ্চার ঠোঁট কাটা জন্মাতে পারে এবং কোন কিছু ভাঙলে বাঁকা করলে সন্তান বিকলাঙ্গ হয়ে জন্ম নিতে পারে এ ধরনের আরো কত সব প্রচলিত রয়েছে কুসংস্কার গুলো।
তবে এই কুসংস্কার গুলো সম্পূর্ণ যে ভিত্তিহীন ও মিথ্যা সেটি আমরা অনেকেই মানি না এবং জানিনা। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করতে এসেছি চন্দ্র সূর্য গ্রহন কালে গর্ভবতী মহিলার কোন নিষেধাজ্ঞা রয়েছে কিনা সে সম্পর্কে।
প্রত্যেকটি গর্ভবতী মায়েরই এ বিষয়ে জেনে রাখা প্রয়োজন কারণ আমাদের সমাজের কুসংস্কার গুলো মানা একেবারে ঠিক নয়। আমরা গর্ভবতী মায়েরা যদি এর সম্পর্কে সঠিক তথ্যগুলো জেনে রাখতে পারি তাহলে অযথা গর্ভাবস্থার সময় চন্দ্র-সূর্য গ্রহণকালে আমাদের কোন রকমের চিন্তা মাথায় আসবে না। তাই এসব সম্পর্কে আমাদের জেনে রাখা দরকার।
মহান রাব্বুল আলামিন ও শেষ দিবসে বিশ্বাস রাখে তার মনে রাখা উচিত যে আল্লাহর অসংখ্য নিদর্শন এর মধ্যে চন্দ্র সূর্যের গ্রহণ এক একটি নিদর্শন মাত্র। কেউ যদি চন্দ্র বা সূর্যগ্রহণ দেখে তার উচিত হবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহ অনুযায়ী কাজ করা ও বেশি বেশি করে সে সময় আল্লাহকে স্মরণ করা।
তাই গর্ভাবস্থায় যদি চন্দ্র-সূর্য গ্রহণ কার লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই একজন গর্ববতী মায়ের কর্তব্য সেসময় বেশি বেশি জিকির করা আল্লাহর ইবাদত করা এবং আল্লাহ তা’আলা কে স্মরণ করা। অন্য কোন কুসংস্কার এড়িয়ে চলা।
মহান আল্লাহর কুদরতি নিদর্শন বলে বিশ্বাস করতে হাদিসে বলা হয়েছে সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ কে। এছাড়াও যখন চন্দ্র সূর্য গ্রহণ লাগে তখন পুরুষদেরকে মসজিদে জামাতের সঙ্গে সালাতুল কুসুফ ও সালাতুল খুশু নামাজ পড়ার জন্য বলা হয়েছে এর বাইরে এতে কোন বিধিনিষেধ নেই।
ইসলামে দৃষ্টিতে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ
গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিতে কিছু আলোচনা রয়েছে সেগুলো আমাদের আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের সাথে শেয়ার করব।
ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গিতে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণকে একটি ক্রান্তিকাল হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এ সময় গর্ভবতী মায়েদের কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। আমাদের সমাজে যেসব প্রচলিত রয়েছে সেগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভ্রান্ত। সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর মাখলুক তথা সৃষ্ট বস্তু এবং এর প্রমাণস্বরূপ ওই আল্লাহ এ দুটোর ওপর গ্রহণ প্রদান করে থাকেন।
এছাড়াও গ্রহণ সূর্য ও চন্দ্রের উপর প্রযোজ্য আল্লাহর কুদরতের আলামত বা নিদর্শন এছাড়া অন্য কিছুই নয় যদিও বিভিন্ন ইতিহাসের গ্রন্থে এর সম্পর্কীয় নানাবিদ বর্ণনা পরিলক্ষিত রয়েছে তবে এই সবগুলোই ভুল ধারণা।
চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণ সূর্য ও চন্দ্র পূজারীদের প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে এর সতর্ক বাণী পৌঁছে দেয় যে এ দুটো অন্যান্য মাখলুকের মত আল্লাহর মাখলুক এবং এরা উপাসনা যোগ্য নয়। এটি হয়তো অন্য ধর্মের লোকেরা আমাদের ইসলামের দৃষ্টিতে দেখবেনা। তবে আমরা মুসলিম হয়েও যদি এগুলো মানি তাহলে আল্লাহ তা’আলা নারাজ হয়ে যাবেন। তাই অবশ্যই ইসলামে দৃষ্টিতে চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ সম্পর্কে উল্লেখ হিত আয়াতগুলো আমাদের মেনে চলা প্রয়োজন।
চন্দ্রগ্রহণ এবং সূর্য গ্রহণের মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা আরো বুঝিয়েছেন যে যেহেতু এরা নিজেরাই বিপদগ্রস্ত হয় যা থেকে এরা আত্মরক্ষা করতে পারে না সেহেতু এগুলো উপাসনার যোগ্য হতে পারে না। বরং এ দুটোকে আল্লাহকে সিনার নিদর্শন হিসেবে গণ্য করায় প্রকৃত বুদ্ধিমতীর পরিচয়।
শুধু তাই নয় আল্লাহ তাআলা আরো বলেছেন, তার নিদর্শন গুলোর মধ্যে রয়েছে রাত দিন সূর্য ও চন্দ্র। তোমরা সূর্যকে সেজদা করো না আর চন্দ্রকেও না আল্লাহকে সেজদা কর যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন যদি তোমরা নিষ্ঠার সঙ্গে শুধু তারই এবাদত করে থাকো (সূরা হা-মীম আস সাজদা)।