জন্ডিস অত্যন্ত সাংঘাতিক একটি রোগ। সাধারণত এর ক্ষতির পরিমাণ তখনই বৃদ্ধি পায় যখন এটা আমরা বুঝতে না পারি কিন্তু এর পরিধি আমাদের শরীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। সাধারণত বিভিন্ন কারণে মানব শরীরে যদি রক্তে বিলুরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায় তাহলে সেখানে জন্ডিস হতে শুরু করে। এটা বড় কোন উপসর্গ নিয়ে আসে না কিন্তু ছোট ছোট কিছু উপসর্গ আছে যেগুলো আমরা লক্ষ্য করলে বুঝতে পারব।
জন্ডিস রোগের চিকিৎসায় সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এই লক্ষণগুলো ফলো করা। সাধারণত তিন কারণে জন্ডিস হতে দেখা যায় যেমন হেপাটাইটিস বা যকৃতের প্রদাহ থেকে শুরু করে পিত্তথলি ব্লক বা পিত্তরসের পথে বাধা এছাড়াও সময়ের আগে রক্তে লোহিত রক্ত কণিকা ভেঙে যাওয়ার কারণে ও জন্ডিস হতে পারে। তবে যেই কারণে জন্ডিস হোক না কেন সঠিক সময় চিকিৎসা করলে খুব অল্পতেই এটা থেকে সুস্থ হওয়া যায়। এর জন্য এর উপসর্গগুলো বোঝার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ চলুন জন্ডিসের উপসর্গ গুলো কি কি সেগুলো জানার চেষ্টা করি।
কিভাবে বুঝবেন জন্ডিস হয়েছে
যাদের জন্ডিস হয়েছে তারা নিজে থেকেই বুঝতে পারে জন্ডিস হয়েছে। সাধারণত জন্ডিসের যে উপসর্গগুলো রয়েছে তার মধ্যে চোখ ও প্রস্রাবের রং হলদে হয়ে যাওয়া অন্যতম। জন্ডিসের আক্রান্ত রোগীদের ১০০ জনের মধ্যে যদি একটি পরীক্ষা করা হয় তাহলে দেখবেন ১০০ জনের মধ্যে পুরো ১০০ জনেরই চোখ এবং প্রস্রাবের রং হলুদ হয়ে গেছে জন্ডিসের কারণে। তাই যাদের এই ধরনের সমস্যা আছে অর্থাৎ চোখ এবং প্রস্রাবের রং একই সঙ্গে হলুদ হয়ে গেছে তারা অবশ্যই জন্ডিস পরীক্ষা করাবেন।
শুধুমাত্র যে এই দুইটা জায়গাতে সমস্যা ধরা পড়বে এমন নয় এর পাশাপাশি ত্বকের রং এর পরিবর্তন হবে। কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে মুখের ভেতরেও হলদেটে ভাবের সৃষ্টি হতে পারে। বাইরে থেকে জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীদের ত্বক দেখলে মনে হবে তার রক্তশূন্যতা হয়েছে অর্থাৎ শরীরে রক্ত নেই এবং হোলডেটে ভাব হয়েছে। এই ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই জন্ডিস পরীক্ষা করাতে হবে।
এর পাশাপাশি জন্ডিস পরীক্ষায় আরো কিছু উপসর্গ দেখা দেয় যেমন অরুচি। আপনার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়েই অরুচি সৃষ্টি হবে অর্থাৎ খাবারের প্রতি অনীহা বা ক্ষুধামন্দা সৃষ্টি হবে যেটা হঠাৎ করে আপনার শরীরের ওজন কমাতে আপনাকে বাধ্য করবে। অনেক রোগীদের ক্ষেত্রে বমি বমি ভাব বা বমি হওয়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে জন্ডিসের পূর্ব লক্ষণ হিসেবে।
অনেক রোগীদের ক্ষেত্রে জ্বর জ্বর ভাব আসতে পারে অনেকের মাঝেমধ্যে জ্বর আসতে পারে জন্ডিসের কারণে। তবে এই সময় অবশ্যই জ্বর মাপাটা অত্যন্ত জরুরি তার কারণ হচ্ছে জন্ডিসে আক্রান্ত হলে এমনিতেই মনে হয় যেন জ্বর এসেছে কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে আপনি যদি জ্বর মাপতে যান তাহলে শরীরের জ্বর পাবেন না। জন্ডিসের আরো একটি বড় লক্ষণ হচ্ছে পেটব্যথা যেটা প্রায় অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।
জন্ডিস রোগের চিকিৎসা
সাধারণত জন্ডিস রোগ রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে এবং লিভারের এনজাইমগুলোকে অকার্যকর করতে সাহায্য করে। যত তাড়াতাড়ি জন্ডিস ধরা পড়বে তত তাড়াতাড়ি এর চিকিৎসা শুরু করা উচিত। আপনি যদি চিকিৎসা করতে দেরি করেন তাহলে এই জন্ডিস আরো বড় আকার ধারণ করবে যা আপনার পাকস্থলীকে ধ্বংস করতে সাহায্য করবে। জন্ডিসের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অবশ্যই ঔষধের প্রয়োজন রয়েছে তবে সবার প্রথমে আপনাকে কিছু নিয়ম মানতে হবে যে নিয়মগুলো মানলেই মূলত জন্ডিস থেকে পুরোপুরি সুস্থ হওয়া যায়।
এই নিয়মগুলোর মধ্যে পরিপূর্ণ বিশ্রাম হচ্ছে একটি আপনি যত বেশি বিশ্রাম নিতে পারবেন তত বেশি আপনার বিভাগ বাড়বে যা আপনার রক্তে বিলিরুবিন কমাতে সাহায্য করবে। এ অবস্থাতে একেবারে স্বাভাবিক খাবার গ্রহণ করার চেষ্টা করতে হবে একেবারে হালকা খাবার মশলা কমযুক্ত খাবার খাবার চেষ্টা করুন। বিশ্রামরত অবস্থায় স্বাভাবিক মাত্রায় পানি পান করার চেষ্টা করুন অতিরিক্ত পানি পান আখের রস ইত্যাদি খেলে যে জন্ডিস ভালো হয়ে যায় এর কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। এছাড়া প্রতিদিন গোসল করা এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খাওয়া জন্ডিস রোগের প্রতিকার করতে রোগীকে সাহায্য করে।