বহু যুগ থেকেই আমরা বিশ্বাস করে আসছি যে গ্রহণ গর্ভের সন্তানের বিকাশ কে প্রভাবিত করে। এছাড়াও গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে হরমোনের পরিবর্তন আনে যার ফলে মেজাজ পরিবর্তন বা উদ্বেগ দেখা যায়। অনেকেই বিশ্বাস করে থাকেন এগুলো গর্ভবতী মায়েদের জন্য চন্দ্রগ্রহণের সময় কিছু ভুলের কারণে হয়ে থাকে।
এছাড়াও আমাদের সমাজে প্রাচীনকাল থেকে কিছু নিয়ম-কানুন রয়েছে যেগুলো একজন গর্ভবতী মায়ের গ্রহণের সময় মেনে চলতে হয়। আসলেই কি সেগুলো মেনে চলা উচিত? নাকি সেগুলো মেনে চলা একেবারেই উচিত নয়?
আমরা আজকে নিয়ে এসেছি আপনাদের জন্য নতুন একটি আর্টিকেল। আজকের আর্টিকেলে আমরা সূর্যগ্রহণের সময় গর্ভবতী মায়ের যেসব করণীয় রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে আলোচনা করব। আশা করি আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনারা এ বিষয়ে সবকিছু জেনে নিতে পারবেন।
আমাদের সমাজে কিছু কুসংস্কার রয়েছে যেমন গর্ভবতী মা কোন কিছু গ্রহণের সময় কাটলে ফিরলে বাচ্চার ঠোঁট কাটা জন্মাবে আবার কোন কিছু ভাঙলে বেকিয়ে দিলে সন্তান নাকি বিকলাঙ্গ হয়ে জন্মাবে এ ধরনের যত কথা প্রচলিত রয়েছে তা বৈজ্ঞানিকভাবে একেবারেই সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা আর ইসলাম ও এর সম্পর্কে কোনোই সমর্থন করেন না। তাই গ্রহণকালে একজন গর্ভবতী মায়ের এসব গুলো মেনে চলা একেবারেই ঠিক নয়। কারন আমরা হলাম মুসলমান।
আর মুসলিমরা যদি এগুলো মেনে থাকে তাহলে একেবারেই আল্লাহ তাআলা নারাজ হয়ে যাবেন। তাই আমরা যেহেতু মুসলিম সেহেতু ইসলামের দৃষ্টিতে আমাদের চলাফেরা করা উচিত ইসলাম যখন এই চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণের সময় গর্ভবতী মায়েদের কোন বিধি-নিষেধ মানতে নিষেধ করেছেন সেহেতু অবশ্যই আমাদের এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
সূর্যগ্রহণ কি
সূর্যগ্রহণ কে আরবিতে খুশব বলা হয়। গ্রহণ লাগলে সূর্য যেমন অন্ধকার ছায়ার আবর্তে পতিত হয়ে অন্ধকার হয়ে যায় ঠিক তেমনি চন্দ্র বছরে দুইবার সেও কক্ষপথে পরিভ্রমণরত অবস্থায় অন্ধকারের ছায়ায় আচ্ছাদিত হয়ে থাকে। এর আংশিক রূপ কখনো দৃশ্যমান হয় ওঠে আবার কখনো ওঠে না। এছাড়া কখনো আবার সার্বিক রূপ পরিদৃষ্ট হয়ে থাকে তাই চন্দ্রের এ কালো রং বা অন্ধকারের হাতছানি কেউ ই সূর্যগ্রহণ রূপে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
সূর্যগ্রহণের সময় গর্ভবতী মায়ের করনীয়
সূর্যগ্রহণের সময় একজন গর্ভবতী মায়ের আলাদাভাবে করণীয় কিছুই থাকে না। একজন গর্ভবতী মা যখন জানতে পারেন যে তার গর্ভে একটি শিশু আস্তে আস্তে বড় হয়ে উঠছে তখন থেকেই সে মায়ের আল্লাহর প্রতি ভক্তি এবং আল্লাহর ইবাদতগুলো সঠিকভাবে পালন করা প্রয়োজন।
কারণ একজন মা যখন গর্ভবতী হন তখন সে মা যা কিছু করবেন তার গর্ভের সন্তান সেগুলোই শিক্ষা পায়। ঠিক সেই জন্যই একজন গর্ভবতী মায়ের উচিত নিয়মত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া আল্লাহর ইবাদত করা আল্লাহর জিকির করা এবং যথাসম্ভব দান সদকা করা।
সূর্যগ্রহণের সময় একজন গর্ভবতী মায়ের আলাদাভাবে কিছু করার থাকে না। সূর্যগ্রহণের সময় একজন গর্ভবতী মা যদি পারেন তাহলে বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করতে হবে আল্লাহর ইবাদত করতে হবে এবং আল্লাহ তাআলার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে।
এছাড়াও হযরত মুবীরা ইবনে-সুবা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে বললেন, সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শন সমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন। কারোর মৃত্যু বা জন্মের কারণে সূর্যগ্রহণ ও বা চন্দ্রগ্রহণ হয় না কাজে যখন তোমরা তা দেখবে তখন তোমরা আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করবে। তার মহত্ত্ব ঘোষণা করবে আর নামাজ আদায় করবে এবং সাদকা প্রদান করবে।
হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর ক্ষমতার বিশেষ নিদর্শন। যখন তোমরা চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণ দেখতে পাবে তখন তাকবির দিবে আল্লাহর কাছে দোয়া করবে নামাজ আদায় করবে এবং দান সদকা করবে। তাই গর্ভবতী মায়ের এই সময়ে বেশি বেশি আল্লাহর ইবাদত করাই উচিত।